Ads

Saturday, 19 September 2015

কেন মুসলমান চরিত্র বাদ দিয়ে কেবল নগ্ন হিন্দু দেবদেবীর ছবি আঁকলেন ফিদা হোসেন ??


ভারতের পাবলো পিকাসো হিসেবে; তবে সেই ভারত নামের জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়েই পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি বলছি একজন কিংবদন্তী শিল্পী মকবুল ফিদা হোসেনের কথা বিতর্ক যার নিত্য সঙ্গী ছিলো
২০১০ সালে গ্রহণ করেন কাতারের নাগরিকত্ব। দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ না থাকায় ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন ভারতের নাগরিকতা। জীবনের শেষ সময়টুকু নির্বাসনে লন্ডন আর কাতারে কাটালেও নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে আসার আকুলতা তাঁর মধ্যে ছিলো প্রবল। তবে ফেরা হয়নি আর। ২০১১ সালের ৯ই জুন লন্ডনের রয়েল ব্রমটন হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৬ বছর।
দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ফিদা হোসেন। হিন্দু দেব-দেবীদের নগ্ন ছবি আঁকায় ভারতের উগ্রবাদী হিন্দুদের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি। ২০০৬ সালে তাঁর আঁকামাদার ইন্ডিয়া’ (ভারতমাতা) ছবিটি আগুনে আরো ঘি ঢেলে দেয়। পুরো দেশের মানচিত্রের উপর তিনি আঁকেন নগ্ন এক নারীর চিত্র। আর শরীরের বিভিন্ন অংশে বসিয়ে দেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের নাম। তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। আদালত তাঁকে সাধারণ মানুষের অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয় জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। ফলশ্রুতিতে দেশ ছাড়েন তিনি
কেন কেবল হিন্দু দেবদেবীদের নগ্ন ছবি আঁকতে গেলেন ফিদা? কেন অন্য ধর্মের কোন চরিত্র আঁকলেন না তিনি? বিষয়টি ব্যাখা করেছেন আর্ট ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের সম্পাদক গিরিশ শাহানে বোম্বে এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজী সাহিত্যের এই স্নাতক খুঁজে দেখতে চেষ্টা করেছেন এর পেছনের কারণ
হিন্দু মিথোলজির সাথে সেই ছোটবেলা থেকেই পরিচয় বিখ্যাত শিল্পী মুকবুল ফিদা হুসেইনের। পান্ধারপুরে জন্ম নেয়া শিল্পীরামলীলা মতো অনুষ্ঠান দেখতে দেখতেই বড় হয়েছেন। প্রচুর পড়াশোনা পণ্ডিতদের কাছ থেকে শিখে নিজের জ্ঞানের ভিত্তি মজবুত করেছেন তিনি
জীবদ্দশায় হিন্দুধর্মের দেব দেবী মণিষীর বহু চিত্রকর্ম এঁকেছেন তিনি। কিন্তু ৯০ দশকের আগে কেউ তার বিরুদ্ধেহিন্দু ধর্মকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করার অভিযোগ তোলেননি। বরং ধর্মনিরপেক্ষতার বিচারে বহু ধর্মাবলম্বীর দেশ ভারতে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। তাঁর চিত্রকর্ম সবসময়ই হিংস্রতা, জুলুম, হতাশা ইত্যাদির বিপক্ষে ছিলো। এমনকি তার ৮১ বছর বয়সে যখন ডানপন্থী হিন্দুরা তাদের ধর্মকে কটাক্ষ করার অভিযোগ এনেছে হুসেইনের বিরুদ্ধে, এমনকি তাকে হত্যার হুমকিও দিযেছেন, তখনও তাকে দোষী বলে মানতে নারাজ গিরিশ শাহানে
গিরিশ জানাচ্ছেন, এই শিল্পীর বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মকে কটাক্ষের প্রথম অভিযোগ আসে ১৯৭০ সালের দিকে তিনি তখন হিন্দুদের দেবদেবী নিয়ে একটি সিরিজ চিত্রকর্ম আঁকছিলেন ৯০ এর দিকে এসবে সেই চিত্রকর্মগুলোই হঠাৎ করে তুমুল আলোচনায় চলে আসে হিন্দুদের মনে তীব্র আঘাত দেয় এসব ছবি তবে বিতর্ক সত্বেও লেখক অবস্থান নিচ্ছেন ফিদার পক্ষেই গিরিশ লিখেছেন, ‘একজন আধুনিক শিল্পীর আঁকা প্রাচীন চরিত্রের চিত্রকর্ম হিসেবে ফিদা হুসেইনের সরস্বতী চিত্রকর্মটি একটি ভালো শিল্পকর্ম
এখন যারা প্রশ্ন তুলেছেন, হুসেইন কেন নগ্ন হিন্দু প্রমিমূর্তির ছবি আঁকলো, কেন কোন মুসলমান চরিত্র নয়. তাদের জন্য খুব সোজা উত্তর দিয়েছেন গিরিশ শাহানে। তিনি জানাচ্ছেন, আদতে মুকবুল ফিদা হুসেইন প্রাচীন চরিত্রগুলো নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ইসলামে প্রাচীন কোন নগ্ন চরিত্রের ঠাঁই নেই, যেভাবে হিন্দু ধর্মে আছে।
গিরিশ লিখেছেন, ‘কোন ত্রিশিল্পী বা কর্টুনিষ্ট যদি মুসলিম কোন চরিত্রে নগ্ন ছবি আঁকে, তাহলে আমি সেটাকেও সমর্থন করি। তবে, একজন কার্টুনিস্ট বা একজন শিল্পীর এরকম একটি প্রদক্ষেপ অনেককে আহত করতে পারে। আবার কৌতুক করার জন্যও হতে পারে। কিন্তু হুসেইন সেসব করেন নি।
ফিদা হোসেন ভারতের গ্রাম, শহর, বিভিন্ন ধর্ম, আধুনিকতা, বৈচিত্র এসবের উন্নতি চেয়েছিলেন বলে মনে করেন গিরিশ। তিনি মনে করেন, একারণেই তিনি সকলের বিরাগভাজন এবং এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন
প্রসঙ্গত, মকবুল ফিদা হোসেনের জন্ম ১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মহারাষ্ট্রে। প্রায় শতায়ু হলেও আজীবন মনে-প্রাণে ছিলেন চিরনবীন। রাস্তা, স্টুডিও, বাসা যেখানেই হোক না কেন মেতে উঠতে পারতেন রং-তুলির খেলায়। অসাধারন সব শিল্পকর্ম দিয়ে তিনি নাম কুড়িয়েছিলেন দেশ-বিদেশে। ভূষিত হয়েছেন ভারত সরকারেরপদ্মশ্রী’ (১৯৫৫), ‘পদ্মভূষণ’ (১৯৭৩) আরপদ্মবিভূষণ’(১৯৯১) সম্মাননায়

No comments:

Post a Comment