বিংশশতাব্দীতে বিজ্ঞানে কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এবং ঘটনা
( ২ )
সুমেরুজ্যোতি
(Aurora Borealis)
আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : খ্রিসচিয়ান বার্কল্যাণ্ড
(Aurora Borealis)
আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : খ্রিসচিয়ান বার্কল্যাণ্ড
'উত্তরের আলো' এবং 'সুমেরুজ্যোতি' ( 'aroraa boriYaalis' ) নাম দেওয়া হয়েছে একটি ব্যাপারকে যা' হাজার হাজার বত্সর ধরে ঘটে চলেছে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র, কিন্তু চোখে দেখা যায় শুধুমাত্র পৃথিবীর অতি-উত্তর অংশে। উত্তরের আলো সত্যসত্যই একটা অতি আশ্চর্যজনক দৃশ্য তার অত্যুজ্জ্বল ও ঝল'সানো পরিমণ্ডল নিয়ে যা ঐসকল স্থানের অধিবাসী এবং পর্যটকদের একইভাবে বিমোহিত ও আশ্চর্যান্বিত করে।
চিত্র ১ : সুমেরুজ্যোতি।
উত্স : NOAA
উত্স : NOAA
১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে নরওয়ে-বাসী খ্রিসচিয়ান বার্কল্যাণ্ড (Kristian Birkeland) একটি সূত্র প্রদান করেন- যে আলো আকাশে দেখা যাচ্ছে তা' গঠিত হয় সৌরকলঙ্ক (sunspot ) থেকে নির্গত বিদ্যুত্গ্রস্থ কণা (charged particle) বিশ্বের আবহমণ্ডলের সংস্পর্শে এলে এবং পরে আকার ধারণ করে ভূচৌম্বকীয় শক্তি দ্বারা। তিনি একটি বায়ুশূণ্য প্রকোষ্ঠে আহিত (charged) ধাতুর গোলককে রেখে চুম্বকশক্তিসম্পন্ন করে দেখালেন সেটা থেকে বিচ্ছুরিত আলোকের রঙ বদল হচ্ছে ; যত চুম্বকশক্তি বাড়ানো যায়, বিচ্ছুরণ তত প্রবল হয়।
বার্কল্যাণ্ডের তত্বকে প্রমাণ করতে গেলে পৃথিবী-পৃষ্ঠের ৮০ কিলোমিটার ঊর্ধে আয়নমণ্ডলে যাওয়া দরকার যেটা সম্ভব হয়েছিল ১৯৭৪ খ্রী-তে। ঐ বত্সর ALfred Zmuda এবং James Armstrong একটি চুম্বকীয় ম্যাপ নির্মাণ করেছিলেন যাকে বলা হয় 'বার্কল্যাণ্ড কারেণ্ট' ম্যাপ।
( ৩ )
গামারশ্মি
আবিষ্কার : ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : পল ভিলার্ড
বিজ্ঞানী : পল ভিলার্ড
গামা রশ্মিগুলি হল তড়িত্চুম্বকীয় তরঙ্গ যাদের তরঙ্গদৈর্ঘz খুবই কম। ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দে পল ভিলার্ড ( Paul Villard ) এই রশ্মি আবিষ্কার করেন এবং গামারশ্মি নাম দেন আর্নস্ট রাদারফোর্ড ( Ernest Rutherford )।
এই ব্রহ্মাণ্ডে আছে শক্তির নানারূপ এবং বিভিন্ন উপায়ে তারা প্রতিভাত হয়। একটা সাধারণ রূপ হল বিকিরণ। বিকিরণ হল তড়িত্-চুম্বকীয় বল দ্বারা উত্পাদিত তরঙ্গশক্তি। এরা নানাপ্রকারের, যাদের ক্ষমতা তিনভাগে বিভক্ত করা যায়- আলফা যারা সরলরেখায় ধাবিত হয়। কিন্তু এদের মাত্রা বিভিন্ন ; আলফা রশ্মি হল সব থেকে দুর্বল, মানুষের চামড়া ভেদ করে সজীব তন্তু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, গামা রশ্মি হল সব থেকে বলিষ্ঠ, কেবলমাত্র শিসা-র মতন ঘন পদার্থ একে প্রতিহত করতে পারে।
আবার, গামা রশ্মি তাদের গঠনে আলফা ও বিটা থেকে ভিন্ন। আ লফা ও বিটা রশ্মিদ্বয় অসংবদ্ধ sub-atomic কণাদ্বারা গঠিত ; যার ফলে এই রশ্মিগুলিকে সহজেই বিপথে পাঠানো সম্ভব অল্পঘন বস্তুর দ্বারা। গামা রশ্মিগুলি অন্য বিভিন্ন স্তরের- শুধুমাত্র কঠিন ঘনবস্তু এদের অন্যপথে চালিত করতে পারে। বস্তুতঃ, গামা রশ্মি হল সবথেকে সবল বিকিরণ- যার ফলে আনবিক বিকিরণ এতো ভয়াবহ। এই উচ্চ শক্তিসম্পন্ন বিকিরণ মানুষের তন্তুকে বিনষ্ট করে দিতে পারে এবং পরিব্যক্তি (mutation ) ঘটাতে পারে।
গামা রশ্মিগুলির সবথেকে ঔত্সুক্য উদ্দীপনকারী চরিত্র হল যে এদের শক্তির স্তর বিভিন্ন। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শক্তি-মাত্রা এতো কমে বাড়ে যে সব রকমের মানদণ্ডে এগুলি ব্যবহার্য, তবে একস্-রে থেকে এদের শক্তি-মাত্রা কম।
মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্রই গামারশ্মি দেখতে পাওয়া যায়। সবথেকে ভালো উদাহরণ হল সূর্য এবং পালসার। এরা সকলেই সুবৃহত্ শক্তির উত্স- সুবৃহত্ আণবিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে হাইড্রোজেন দহনের মধ্য দিয়ে। ফলে রশ্মির আকারে বিশাল বিকিরণ নির্গত হয়। পৃথিবীর রক্ষাপ্রদ বায়ুমণ্ডলের বাইরে বিকিরণের রূপ নেয় কসমিক রশ্মির আকারে। কসমিক রশ্মি বিশাল শক্তির অধিকারী গামারশ্মির কারণে।
মহাবিশ্বের প্রায় সর্বত্রই গামারশ্মি দেখতে পাওয়া যায়। সবথেকে ভালো উদাহরণ হল সূর্য এবং পালসার। এরা সকলেই সুবৃহত্ শক্তির উত্স- সুবৃহত্ আণবিক বিক্রিয়া ঘটে চলেছে হাইড্রোজেন দহনের মধ্য দিয়ে। ফলে রশ্মির আকারে বিশাল বিকিরণ নির্গত হয়। পৃথিবীর রক্ষাপ্রদ বায়ুমণ্ডলের বাইরে বিকিরণের রূপ নেয় কসমিক রশ্মির আকারে। কসমিক রশ্মি বিশাল শক্তির অধিকারী গামারশ্মির কারণে।
দুটি আইসোটোপ, কোবল্ট-৬০ এবং পটাসিয়াম-৪০ গামারশ্মিগুলি নির্গত করে। কোবল্ট-৬০ তৈরি হয় ত্বরক যন্ত্রে (Accelerator) এবং হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়। পটাসিয়াম-৪০ আসে প্রকৃতি থেকে।
( ৪)
জৈব যৌগ পৃথকীকরণে কলাম ক্রোমাটোগ্রাফির কৃত্কৌশল
( Column Chromatography Technique for Organic Compound Separation )
( Column Chromatography Technique for Organic Compound Separation )
আবিষ্কার : ১৯০১ খীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : মিখাইল টিভেট, রশিয়া
বিজ্ঞানী : মিখাইল টিভেট, রশিয়া
একটা সাদা দড়ি বা সুতা (string)-র একটা দিক ঝুলন্ত অবস্থায় রঞ্জকের পাত্রে নিমজ্জিত করে রাখলে দড়িটি রঞ্জককে শুষে নিতে শুরু করে । কিন্তু রং বিভিন্ন হলে দড়ি ধরে ওঠার দূরত্বও হবে বিভিন্ন । বহুদিন ধরেই রঞ্জক প্রস্তুতকারকরা 'ক্রোমাটোগ্রাফি' ব্যবহার করে আসছেন, মিশ্রণ থেকে বিভিন্ন রংকে আলাদা করার কাজে, বিশেষতঃ যদি মিশ্রণের উপাদানগুলি অল্প পরিমাণে হয় । এই কৃত্কৌশলটি অত্যন্ত প্রযোজ্য যখন মিশ্রণের উপাদানগুলির ভৌতিক (physical) ও রাসায়নিক (chemical) ধম একই হয় এবং সাধারণ পৃথক্করণের উপায়গুলি কাজে দেয় না । 'ক্রোমাটোগ্রাফি' কথাটির অর্থ রং দিয়ে লেখা [গ্রীক ভাষায় : khromatos অর্থ রং, graphos অর্থ লিখিত]। ক্রোমাটোগ্রাফি কৃত্কৌশলটি আবিষ্কার করেন মিখাইল সোয়েট (Mikhail tswett) ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে ।
ক্রোমাটোগ্রাফি-তে আলাদা করার কৃত্কৌশলগুলির ভিত্তি হল মিশ্রণে উপাদানগুলির বিন্যাস- স্থির (stationary) এবং সচল (mobile) অবস্থা । স্থির অবস্থাটি হতে পারে একটি শোষকের কলাম, একটি কাগজ, একটি পাতলা শোষকের আবরণ কাচের উপর, ইত্যাদি, যার মধ্য দিয়ে সচল অবস্থা যায় । সচল অবস্থাটি হতে পারে তরল পদার্থ বা গ্যাস । যখন স্থির কঠিন অবস্থাকে একটি কলাম হিসাবে নেওয়া হয়, প্রথাটিকে বলা হয় 'কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি' ( চিত্র ) ।
কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি
চিত্র : কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি
কলাম ক্রোমাটোগ্রাফি-তে সাধারন শোষকগুলি হল সিলিকা, আলুমিনা, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফসফেট, ম্যাগনেসিয়া, স্টার্চ, ইত্যাদি । দ্রাবক (solvent) নির্বাচন করা হয় শোষক ও দ্রাবকের প্রকৃতি বিচার করে । মিশ্রণের উপাদানগুলির কত তাড়াতাড়ি পৃথক্করণ হবে তা' নির্ভর করবে শোষকের তত্পরতা এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উপর । যদি শোষকের তত্পরতা খুব উচ্চ হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার খুব কম হয়, পৃথক্করণ হবে খুব ধীরে, কিন্তু তার গুণমান হবে ভাল । অন্যদিকে যদি শোষকের তত্পরতা নিম্নস্তরের হয় এবং দ্রাবকের বিপরীত-ধর্মিতার উচ্চস্তরের হয়, পৃথক্করণ হবে খুব তাড়াতাড়ি, কিন্তু গুণমান হবে নিকৃষ্ট অর্থাত্ উপাদানের পৃথক্করণ ১০০-শতাংশ বিশুদ্ধ হবে না ।
শোষককে তরলায়িত (slurry) করা হয় উপযুক্ত তরল পদার্থ সংযোগে এবং ঢালা হয় একটি নলাকৃতি টিউবে যার তলাটি হল ছিদ্রপূর্ণ বা তুলা দিয়ে আটকানো । যে মিশ্রণটিকে আলাদা করতে হবে, তাকে একটি উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করে টিউবে উপর দিক থেকে ঢালতে হবে । মিশ্রণ টিউব ধরে যত নামবে উপাদানগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় শোষিত হবে ; যার শোষণ-ক্ষমতা সবথেকে বেশি সে থাকবে সবথেকে উপরে এবং সেই মতন নলের উপরথেকে নীচে আলাদা আলাদা ব্যাণ্ড তৈরি হবে । যে পদ্ধতিতে শোষক থেকে উপাদানগুলিকে ব্যাণ্ডে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে 'এলুশন' (এলতেেওন) ।
শোষককে তরলায়িত (slurry) করা হয় উপযুক্ত তরল পদার্থ সংযোগে এবং ঢালা হয় একটি নলাকৃতি টিউবে যার তলাটি হল ছিদ্রপূর্ণ বা তুলা দিয়ে আটকানো । যে মিশ্রণটিকে আলাদা করতে হবে, তাকে একটি উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত করে টিউবে উপর দিক থেকে ঢালতে হবে । মিশ্রণ টিউব ধরে যত নামবে উপাদানগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় শোষিত হবে ; যার শোষণ-ক্ষমতা সবথেকে বেশি সে থাকবে সবথেকে উপরে এবং সেই মতন নলের উপরথেকে নীচে আলাদা আলাদা ব্যাণ্ড তৈরি হবে । যে পদ্ধতিতে শোষক থেকে উপাদানগুলিকে ব্যাণ্ডে রূপান্তর করা হয়, তাকে বলে 'এলুশন' (এলতেেওন) ।
( ৫)
মনুষ্য-রক্তের শ্রেণির আবিষ্কার
আবিষ্কার : ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দ
বিজ্ঞানী : কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার
বিজ্ঞানী : কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার
১৭১৮ খ্রীষ্টাব্দে হারভে 'রক্তসংবহন' আবিষ্কার করার পর থেকেই ক্রমাগত প্রচেষ্টা চলেছিল মানুষের দেহে শোণিত সংক্রমণ করার জন্য । ফরাসী দার্শনিক ডেনিস এবং শল্যচিকিত্সক মারে প্রথম চেষ্টা চালান মানুষের দেহে ভেড়ার রক্ত (১৫০ মিলিলিটার) সংক্রমন করার । পরবর্তীকালে আরও অনেকে এই প্রচেষ্টা চালান কিন্তু ফল হয় মারাত্মক । ফলশ্রুতি হিসাবে শোণিত সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যায় ।
এক শতাব্দী পরে আবার প্রচেষ্টা হয় শোণিত সংক্রমণের । ১৮১৯ খ্রী-তে ব্ল্যান্ডেল ইতিহাসে প্রথম সাফল্যের সঙ্গে শোণিত সংক্রমণ করান, একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে । তবে সাধারণভাবে বলা যায় শোণিত সংক্রমণ প্রচেষ্টা হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায় ; কখনও বা রোগী সুস্থ হন, কখনও বা তাঁর মৃত্যু হয় । বস্তুতঃ, এর কারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত ছিল ।
অস্ট্রিয়া-র স্কলার কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯০০ খ্রী-তে । একটা টেস্ট টিউবে তিনি নিজের লোহিত রক্তকণিকা সঙ্গে মেশালেন নিজের শরীরের রক্তাম্বু (blood serum), কোনও পুঞ্জীভবন হতে দেখলেন না : যখন বিভিন্ন ব্যক্তির রক্তকণার সঙ্গে রক্তাম্বু মেশালেন, দেখলেন পুঞ্জীভুত হচ্ছে বা কখনও কখনও হচ্ছে না । এই ঘটনা অবশ্য অনেকেরই নজরে এসেছিল, কিন্তু ল্যাণ্ডস্টাইনার ছাড়া কেহই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি । লোহিত রক্তকণিকার দু'প্রকারের বিশেষ গঠনবিন্যাস আছে যারা একত্রে অথবা আলাদা ভাবে থাকতে পারে । রক্তাম্বু-র একটি প্রতিরক্ষিকা (antibody) আছে, নাম লোহিত রক্তকণিকার ভিতরের বিশেষ গঠনের agglutinin; এই agglutinin যখন লোহিত রক্তকণিকার বিশেষ গঠনবিন্যাসের মধ্যে পড়ে, পূঞ্জীভবন হয় যা রোগীর রক্তসংবহন-কালে মারাত্মক হতে পারে । এর থেকে ল্যাণ্ডস্টাইনার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মনুষ্য রক্ত-শ্রেণী হল বংশাণুধৃত ।
১৯০৯ খ্রী-তে সমস্যার সমাধানকল্পে ল্যাণ্ডস্টাইনার রক্তকে চারটি শ্রেণী-তে ভাগ করলেন- A, B, AB এবং O। ডাক্তাররা রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক শ্রেণী নির্ধারণ করে রক্তসংবহন করতেন ।
যেহেতু রক্ত-সংবহন পূর্বে ধারাবাহিকভাবে বিফল হয়েছে, সাধারণ চিকিত্সকরা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন ; তবে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছিলেন । নাটকীয়ভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এনে দিল রক্ত-সংবহন পরীক্ষার এক বিশাল সুযোগ । যেহেতু যুদ্ধে আহতদের জীবন নিয়ে সমস্যা, রক্ত-সংবহন প্রথা হয়ে দাঁড়ালো আহতদের মৃত্যুর নিশ্চিত দরজা থেকে ফিরিয়ে আনার এক অস্ত্র । ডাঃ ওল্ডেনবার্গ প্রথম পুঞ্জীভবনের প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য রক্ত-মিলান পরীক্ষা শুরু করলেন রক্ত-সংবহন প্রক্রিয়ার আগে । দু'জন ব্যক্তির মধ্যে রক্তসংবহন তখনই সম্ভব যখন কোনও পূঞ্জীভবন হবে না লোহিত রক্তকণিকা আর রক্তাম্বু মেশালে । এই প্রক্রিয়া বিশাল সাফল্য এনে দিল এবং প্রচুর জীবন বাঁচলো । পরবর্তী বত্সরগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবহারের ফলে রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো একটি নিরাপদ ব্যবস্থা, এবং ১৯২০ খ্রী-র শেষদিকে ইয়োরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো মেডিকেল শাস্ত্রের একটি সফল ও সর্বগ্রাহ্য প্রক্রিয়া ।
আমরা এখন জানি বিভিন্ন জাতির নরনারীর রক্ত-শ্রেণী বিভিন্ন রকমের । যথা, শ্রেণী O খুবই সাধারন UKতে, শ্রেণী B- এশিয়া মহাদেশে । O শ্রেণী হল সব থেকে পুরাণো- প্রস্তরযুগ থেকে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে । শ্রেণীদ্বয় A ও B পরে এসেছে অভিপ্রয়াণ মারফত্, যেমন আফ্রিকা থেকে ইয়োরোপ খ্রী-পূর্ব ২০,০০০ থেকে ১০,০০০ -এর মধ্যে ।
এক শতাব্দী পরে আবার প্রচেষ্টা হয় শোণিত সংক্রমণের । ১৮১৯ খ্রী-তে ব্ল্যান্ডেল ইতিহাসে প্রথম সাফল্যের সঙ্গে শোণিত সংক্রমণ করান, একজন মানুষের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে । তবে সাধারণভাবে বলা যায় শোণিত সংক্রমণ প্রচেষ্টা হতাশাজনক হয়ে দাঁড়ায় ; কখনও বা রোগী সুস্থ হন, কখনও বা তাঁর মৃত্যু হয় । বস্তুতঃ, এর কারণ মানুষের কাছে অজ্ঞাত ছিল ।
অস্ট্রিয়া-র স্কলার কার্ল ল্যাণ্ডস্টাইনার এই বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন ১৯০০ খ্রী-তে । একটা টেস্ট টিউবে তিনি নিজের লোহিত রক্তকণিকা সঙ্গে মেশালেন নিজের শরীরের রক্তাম্বু (blood serum), কোনও পুঞ্জীভবন হতে দেখলেন না : যখন বিভিন্ন ব্যক্তির রক্তকণার সঙ্গে রক্তাম্বু মেশালেন, দেখলেন পুঞ্জীভুত হচ্ছে বা কখনও কখনও হচ্ছে না । এই ঘটনা অবশ্য অনেকেরই নজরে এসেছিল, কিন্তু ল্যাণ্ডস্টাইনার ছাড়া কেহই ব্যাখ্যা দিতে পারেননি । লোহিত রক্তকণিকার দু'প্রকারের বিশেষ গঠনবিন্যাস আছে যারা একত্রে অথবা আলাদা ভাবে থাকতে পারে । রক্তাম্বু-র একটি প্রতিরক্ষিকা (antibody) আছে, নাম লোহিত রক্তকণিকার ভিতরের বিশেষ গঠনের agglutinin; এই agglutinin যখন লোহিত রক্তকণিকার বিশেষ গঠনবিন্যাসের মধ্যে পড়ে, পূঞ্জীভবন হয় যা রোগীর রক্তসংবহন-কালে মারাত্মক হতে পারে । এর থেকে ল্যাণ্ডস্টাইনার একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মনুষ্য রক্ত-শ্রেণী হল বংশাণুধৃত ।
১৯০৯ খ্রী-তে সমস্যার সমাধানকল্পে ল্যাণ্ডস্টাইনার রক্তকে চারটি শ্রেণী-তে ভাগ করলেন- A, B, AB এবং O। ডাক্তাররা রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে সঠিক শ্রেণী নির্ধারণ করে রক্তসংবহন করতেন ।
যেহেতু রক্ত-সংবহন পূর্বে ধারাবাহিকভাবে বিফল হয়েছে, সাধারণ চিকিত্সকরা এটি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতেন ; তবে বহু সংখ্যক বিজ্ঞানী এটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছিলেন । নাটকীয়ভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এনে দিল রক্ত-সংবহন পরীক্ষার এক বিশাল সুযোগ । যেহেতু যুদ্ধে আহতদের জীবন নিয়ে সমস্যা, রক্ত-সংবহন প্রথা হয়ে দাঁড়ালো আহতদের মৃত্যুর নিশ্চিত দরজা থেকে ফিরিয়ে আনার এক অস্ত্র । ডাঃ ওল্ডেনবার্গ প্রথম পুঞ্জীভবনের প্রতিক্রিয়া জানবার জন্য রক্ত-মিলান পরীক্ষা শুরু করলেন রক্ত-সংবহন প্রক্রিয়ার আগে । দু'জন ব্যক্তির মধ্যে রক্তসংবহন তখনই সম্ভব যখন কোনও পূঞ্জীভবন হবে না লোহিত রক্তকণিকা আর রক্তাম্বু মেশালে । এই প্রক্রিয়া বিশাল সাফল্য এনে দিল এবং প্রচুর জীবন বাঁচলো । পরবর্তী বত্সরগুলিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবহারের ফলে রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো একটি নিরাপদ ব্যবস্থা, এবং ১৯২০ খ্রী-র শেষদিকে ইয়োরোপ ও উত্তর আমেরিকায় রক্ত-সংবহন হয়ে দাঁড়ালো মেডিকেল শাস্ত্রের একটি সফল ও সর্বগ্রাহ্য প্রক্রিয়া ।
আমরা এখন জানি বিভিন্ন জাতির নরনারীর রক্ত-শ্রেণী বিভিন্ন রকমের । যথা, শ্রেণী O খুবই সাধারন UKতে, শ্রেণী B- এশিয়া মহাদেশে । O শ্রেণী হল সব থেকে পুরাণো- প্রস্তরযুগ থেকে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে । শ্রেণীদ্বয় A ও B পরে এসেছে অভিপ্রয়াণ মারফত্, যেমন আফ্রিকা থেকে ইয়োরোপ খ্রী-পূর্ব ২০,০০০ থেকে ১০,০০০ -এর মধ্যে ।
বিশদ তথ্যের জন্য দেখুন : অবসর-স্বাস্থ্য বিভাগ, 'রক্ত অনুপ্রবেশীকরণের কথা' ।
দ্র: The Discovery of Human Blood Group, www.nobelkepu.org.cn/english/life/134450.shtml
( চলবে )
No comments:
Post a Comment