মরণঘাতি ড্রোনের নিশানা
বারাক
ওবামার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে
দায়িত্ব নেওয়ার পর
তার
ওপর
দুটি
বড়
ধরনের
যুদ্ধের ধাক্কা
সামলানোর দায়িত্ব এসে
পড়ে। তা
হচ্ছে
ইরাক
ও
আফগানিস্তানের যুদ্ধ। এ
দুটি
যুদ্ধের যবনিকা
টানতে
টানতে
তিনি
নিজেই
তলে
তলে
আরেক
যুদ্ধ
শুরু
করে
দেন। তা
হচ্ছে,
জঙ্গি
নিধনে
ড্রোন
হামলা। দূর
নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে চালানো
এসব
মানববিহীন বিমান
বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে
আঘাত
হেনে
থাকে। লক্ষ্যবস্তু বলতে
প্রায়
সবই
সন্দেহের তালিকায় থাকা
জঙ্গি
আস্তানা। অনেকটা অনুমান
নির্ভর
এ
হামলায় কেবল
জঙ্গিরাই যে
মারা
যাচ্ছে,
তা
নয়। বেসামরিক প্রাণও
ঝরছে
দেদার।
জঙ্গি
নির্মূলে পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, ইয়েমেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে
চলছে
এই
ড্রোন
হামলা।
ওয়াশিংটনের বিবেচনায় অস্ত্রটি বেশ
কার্যকর ও
জনপ্রিয়। তবে
বাস্তবতা হলো,
এই
অস্ত্রের আঘাতে
কে
বা
কারা
মারা
যাবে,
তা
সুনিশ্চিত না
হয়েই
অনেক
ক্ষেত্রে হামলা
চালায়
যুক্তরাষ্ট্র। ড্রোন
হামলার
ধরন
অনেকটা
এমন
যে,
যা
যারে
যা,
প্রাণ
কেড়ে
আন।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস
এর
এক
প্রতিবেদনে জানানো
হয়,
যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন
হামলায় কয়েক
শ
ভয়ংকর
জঙ্গি
নিহত
হয়েছে। তাদের
মধ্যে
আল
কায়েদার শীর্ষস্থানীয় বেশ
কিছু
নেতাও
রয়েছে। কিন্তু
দুঃখজনক হলো—এই হামলায় অনেক
বেসামরিক মানুষের প্রাণ
গেছে।
ড্রোন
হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ব্যাপারে খুব
কম
ক্ষেত্রেই মার্কিন প্রশাসন দায়
স্বীকার করেছে।
স্বাধীন তদন্তে
দেখা
গেছে,
প্রশাসনের স্বীকারোক্তির চেয়ে
বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির সংখ্যা
অনেক
বেশি।
কয়েকটি সংগঠনের প্রকাশ
করা
সংকলিত
তথ্যের
ওপর
ভিত্তি
করে
যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তন
প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন
ফরেন
রিলেশনসের বিশেষজ্ঞ মিকা
দাবি
করেন,
২০০১
সালের
১১
সেপ্টেম্বর থেকে
পাকিস্তান, ইয়েমেন ও
সোমালিয়ায় প্রায়
৫২২টি
ড্রোন
হামলা
চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে
তিন
হাজার
৮৫২
জন
মানুষ
নিহত
হয়েছে। তাদের
মধ্যে
৪৭৬
জন
বেসামরিক মানুষ।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র তাসনিম
আসলামের ভাষ্য,
মার্কিন ড্রোন
হামলায় হতাহতের সংখ্যা
নিয়ে
নানা
তথ্য
রয়েছে। তবে
এই
হামলায় তাঁর
দেশে
নিহত
ব্যক্তির সংখ্যা
দেড়
হাজারের মতো
হবে।
আহত
হাজারো।
ব্যুরো
অব
ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমের তথ্য
অনুসারে, পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন
হামলায় দুই
শতাধিক
শিশুসহ
শত
শত
বেসামরিক মানুষ
নিহত
হয়েছে।
দিন
যত
যাচ্ছে,
এটা
পরিষ্কার হয়ে
উঠছে
যে
যুক্তরাষ্ট্রে বসে
যাঁরা
পৃথিবীর অন্য
কোনো
প্রান্তের দুর্গম
এলাকায় ড্রোন
হামলা
পরিচালনা করেন,
তাঁরা
অনেক
ক্ষেত্রেই কাকে
মারতে
যাচ্ছেন, তা
জানেন
না।
প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ অনুমানের ওপর
ভিত্তি
করে
যুক্তরাষ্ট্র যে
ড্রোন
হামলা
চালায়,
বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষের হতাহতের খতিয়ানই সেটা
প্রমাণ
করে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক
স্বীকারোক্তিতে এই
ধারণা
আরও
জোরালো
হয়েছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে,
চলতি
বছরের
জানুয়ারিতে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী ড্রোন
হামলায় আল-কায়েদার হাতে জিম্মি থাকা
দুই
পশ্চিমা নাগরিক
নিহত
হয়েছেন। তাঁদের
একজন
মার্কিনি, অন্যজন
ইতালীয়। এ
দুজনের
মৃত্যুর ঘটনার
সত্যতা
নিশ্চিত করতে
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ
কয়েক
সপ্তাহ
লেগে
গেছে।
এ
ঘটনাকে
খুবই
দুঃখজনক বলে
অভিহিত
করেছেন
ওবামা।
ওই
দুজনের
পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও ঘোষণা
দিয়েছেন তিনি।
লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে নিশ্চিত না
হয়ে
যুক্তরাষ্ট্রের এমন
ড্রোন
হামলা
চালানোর আরও
নজির
আছে।
পাকিস্তান থেকে
ইয়েমেন, সোমালিয়া পর্যন্ত মার্কিন ড্রোন
হামলা
সম্প্রসারিত হয়েছে। আমেরিকানদের জীবন
বিপন্ন
না
করে
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নির্মূলের এই
পদ্ধতিটি যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়। কিন্তু
গোপন
এই
যুদ্ধকৌশলের সততা,
নৈতিকতা ও
ফল
নিয়ে
বিভিন্ন মহলে
গুরুতর
প্রশ্ন
রয়েছে।
খোদ
ওবামা
প্রশাসনের সাবেক
কিছু
নিরাপত্তা কর্মকর্তাও ড্রোন
যুদ্ধ
প্রকল্পের দূরদর্শিতা নিয়ে
গুরুতর
সন্দেহ
প্রকাশ
করেছেন। বাইরের
বিশেষজ্ঞরাও অনেক
আগে
থেকে
ড্রোন
হামলার
ফল
প্রকাশ্যে স্বীকার করা
দাবি
জানিয়ে আসছেন।
কিন্তু
এসব
বিষয়
কখনো
আমলে
নেয়নি
মার্কিন প্রশাসন।
ড্রোন
হামলায় দুই
পশ্চিমা নাগরিক
নিহত
হওয়ার
ঘটনাটি
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে
এই
প্রকল্প নিয়ে
একটা
খোলামেলা আলোচনার সুযোগ
তৈরি
করে
দেবে
বলে
আশা
করেন
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা
প্রতিষ্ঠান স্টিমসন সেন্টারের র্যাচেল স্টহ্ল।
এই
বিশেষজ্ঞের ভাষ্য,
ড্রোন
সূক্ষ্ম অস্ত্র। এতে
কারা
নিহত
হচ্ছে—সে-সংক্রান্ত ব্যর্থতার দায়
গোয়েন্দাদের।
No comments:
Post a Comment