
গোটা পৃথিবীতে বিরল একটি গুহা। ইরানে অবস্থিত ব্যতিক্রমধর্মী ও বিস্ময়কর এই প্রাকৃতিক নিদর্শনটির নাম ‘গারে আলিসাদর’ বা ‘আলিসাদর গুহা।’ ব্যতিক্রমধর্মী বলার কারণ হলো এ ধরনের নিদর্শন পৃথিবীতে বিরল। হামেদান শহর থেকে প্রায় একশ’ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে একটি পাহাড়ের নিচে এই গুহাটি অবস্থিত। ওই এলাকার স্থানীয় লোকজন গুহাটির নাম দিয়েছে আলীসাদ্র। গুহাটির ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য হলো এর ভেতরে অসংখ্য লেক বা নালা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে আছে। লেকগুলো আঁকাবাঁকা। লেকের পানি দেখতে অসম্ভব স্বচ্ছ।
পানির কোনো রং নেই, গন্ধও নেই। স্বচ্ছতার কারণে পাঁচ মিটার গভীর পর্যন্ত স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। পানির স্বাদ সাধারণ মিষ্টি পানির মতোই। এর মধ্যে যে পানি আছে তার গভীরতা হলো আট মিটার বা সাড়ে ২৬ ফুট। গুহার উচ্চতা প্রায় ৪০ মিটার বা একশ’ বত্রিশ ফুট। তবে পানির এই গভীরতা সব সময় সমান থাকে না, মাঝেমধ্যে ওঠানামা করে। ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ২০ থেকে ৪০ ইঞ্চির মতো বাড়ে এবং কমে। সাত কোটি বছরের প্রাচীন এই গুহাটি ১৯৬৩ সালে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত হয়েছে। হামেদানের পর্বতবাসী বা পর্বতারোহীরা এই রহস্যময় গুহাটি আবিষ্কার করেন। পাহাড়ের নিচের এই পানি গুহাটির এ পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে। কৌতূহলী দর্শকরা হেঁটে কিংবা নৌকা বেয়ে গুহার ভেতরের এই করিডর উপভোগ করতে পারে। ফার্সি ১৩৭৩ সাল অর্থাৎ ১৯৯৪ সালে ফ্রান্সের স্ট্রাসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক বিস্ময়কর এই আলিসাদর গুহার ওপর গবেষণা চালানোর জন্য আসেন। তাদের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ এই গুহাটির বৈশিষ্ট্যগত স্বাতন্ত্রে চমৎকৃত হয়ে বলেছেন আলিসাদর গুহাটি বিশ্বের অন্যান্য জলগুহার তুলনায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী এবং নিশ্চিতভাবে এই গুহাটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পানিগুহা। আলিসাদর গুহার ভেতরের অসাধারণ দৃশ্যাবলী, এর ভেতরের চমৎকার আবহাওয়া, সুনসান নীরবতা এত বেশি চিত্তাকর্ষক যে, যে কোনো পর্যটককেই আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে হামেদানের এই গুহাটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
হাজার হাজার দর্শক প্রতি বছর এই গুহা দর্শনে হামেদান সফরে আসে। স্থানীয় দর্শনার্থী এবং বিদেশি পর্যটকরা এই গুহা পরিদর্শন শুরু করেন ১৯৭৫ সালে। ১৯৯১ সালে আলিসাদর ট্যুরিজম কোম্পানি পুরো এলাকার উন্নয়ন কাজ শুরু করে। বর্তমানে সেখানে হোটেল, অতিথিশালা, কাঠনির্মিত ভিলা এবং তাঁবু গাড়ার মতো প্রশস্ত জায়গা অহরহ এবং সহজলভ্য। এ ছাড়াও আছে বিনোদনের জন্য সিনেমা-থিয়েটার ও খেলার মাঠ? খাওয়া-দাওয়ার জন্য আছে রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে আলিসাদর গুহা মনোরম একটি অবকাশযাপন কেন্দ্র হিসেবেও বিখ্যাত। এ ধরনের গুহা পৃথিবীতে খুবই বিরল। আমেরিকায় একটি গুহা আছে কিন্তু তার নিচে পানি নেই। আরেকটি আছে ইন্দোনেশিয়ায় তবে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পানিগুহা হিসেবে এই আলিসাদর গুহাটির খ্যাতি আজো আকাশছোঁয়া।
No comments:
Post a Comment