Ads

Sunday 3 May 2015

পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার কথা – ২

পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার কথা – ২

পূর্বের পোস্টে বোসন আর ফার্মিয়ান কণার কথা বলেছিলাম আজ ফার্মিয়ান কণাদের দিয়েই শুরু করি । এই কণা গুলোকে বলা হয় ‘বস্তু কণা’ অর্থাৎ আমরা আমাদের চারপাশে যাই দেখি সবই এই ফার্মিয়ান কণা দিয়ে গঠিত (তবে ফার্মিয়ান কণার মধ্যে যে বল আছে তা কিন্তু বোসন কণার জন্য সৃষ্টি) , এরা অড হাফ ইন্টিজার ১/২ স্পিনযুক্ত  কণা অর্থাৎ ১/২ ,৩/২ ,৫/২ ইত্যাদি । এই কণাগুলো পদার্থবিদ ওলফ্ গ্যাংগ পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলে । এই নীতি অনুযায়ী দুইটি অনুরুপ কণিকা একই অবস্থায় (state) থাকতে পারে না । অর্থাৎ অনিশ্চয়তার নীতির সীমার মধ্যে তাদের একই অবস্থান এবং একই বেগ থাকা সম্ভব নয় । এই নীতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ব্যাখ্যা করে , কেন বল কণিকার (বোসন কণাদের বল কণিকা বলা হয় ) প্রভাব বস্তু কণিকা গুলি কোন একটি উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট অবস্থায় বিরাজ করে না । অর্থাৎ যদি দুইটি বস্তু কণার অবস্থান প্রায় একই হয় , তবে তাদের বেগ অবশ্যই ভিন্ন হবে । আর এই কারনেই কণাগুলো একই অবস্থানে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না । যদি এই বর্জন নীতি ছাড়াই বিশ্ব গঠিত হতো , তাহলে কোয়ার্ক গুলো ভিন্ন ভিন্ন সুনির্দিষ্ট প্রোটন আর নিউট্রন গঠন করতো না  অথবা প্রোটন আর নিউট্রন , ইলেক্ট্রন এর সাথে মিলে সুনির্দিষ্ট পরমাণু গঠন করতো না ।
উপরে কোয়ার্কের কথা বলা হয়েছে যারা না জানে তারা আবার বলবে এই কোয়ার্ক মশাই আবার কে? যে কিনা আবার  প্রোটন আর নিউট্রন কে গঠন করে , আসলে কোয়ার্ক হচ্ছে ফার্মিয়ান কণার একটি গ্রুপের নাম । গ্রুপ না বলে বলা উচিত ফার্মিয়ান কণাদের দুইটি পরিবারের একটি পরিবার ।  ফার্মিয়ান কণাদের পরিবার  দুইটি হচ্ছে-
ক) কোয়ার্ক এবং
খ) লেপ্টোন

চিত্র-১: ফার্মিয়ান কণাদের পরিবার  ।
কোয়ার্ক হলো এক প্রকার মৌলিক কণিকা। এরা হ্যাড্রনদের* গঠন উপাদান। মুরে জেল-ম্যান এদের নাম দেন কোয়ার্ক। নামটি জেমস জয়েস এর ফিনেগান্স ওয়েক এর একটি হেঁয়ালিপূর্ণ উক্তি: “থ্রি কোয়ার্ক্স ফর মিউস্টার মার্ক!” থেকে নেয়া হয়েছে।
কোয়ার্ক এর ছয়টি ফ্লেভার আছে: আপ, ডাউন, চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম। এই প্রতিটি ফ্লেভারের আছে তিনটি করে বর্ণ: লাল, সবুজ ও নীল। কোয়ার্কের তড়িতাধান ভগ্নাংশ (প্রোটন বা ইলেকট্রনের তুলনায়) পরিমাণ হয়ে থাকে।
আমরা যে প্রোটন এবং নিউট্রন এর কথা জানি তাদের মধ্যে প্রোটন মূলত ২টি  up quark এবং ১টি  down quark দিয়ে গঠিত  এবং নিউট্রন ১টি  up quark এবং ২টি  down quark দিয়ে গঠিত । এ ছাড়া অন্যান্য কোয়ার্ক দিয়ে অনেক কণা গঠিত হয় কিন্তু এদের ভর বেশি বলে এরা প্রোটন বা নিউট্রন এ রুপান্তর হয় ।

চিত্র-২ : কোয়ার্ক দ্বারা প্রোটন ও নিউট্রনের গঠন ।
এইবার আসি লেপ্টোন এর কথায় , আমরা যে ইলেক্ট্রন এর কথা জানি তা লেপ্টোন পরিবারের সদস্য । এই লেপ্টোন কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় –
  • চার্জ লেপ্টোন
  • নিউট্রাল লেপ্টোন (যা  নিউট্রিনো নামে বেশি পরিচিত )
চার্জ লেপ্টোন কণা অন্য কোন কণার সাথে মিলিত হয়ে যৌগিক কণা গঠন করতে পারে , যেমন বলা যায় পজিট্রোনিয়াম পদ্ধতি বা Positronium system (Ps),যা মূলত ঋণাত্মক ইলেকট্রন ( e)  এবং প্রতিইলেকট্রন বা ধনাত্মক পজিট্রন (e+) সমন্বয়ে গামা রশ্মি উৎপন্ন করে বায়ু মাধ্যমে যার স্থায়িত্ত ১৪৫ ন্যানো সেকেন্ড । অন্য দিকে ‘নিউট্রাল লেপ্টোন’ কণা অন্য কোন কণার সাথে মিলিত হবার প্রবণতা খূব একটা দেখায় না

চিত্র-৩ : পজিট্রোনিয়াম পদ্ধতি
কোয়ার্কের মতো লেপ্টোনের ও ছয়টি ফ্লেভার আছে যা ৩টি প্রজন্ম (Generation) গঠন করে-
  • ১ম প্রজন্ম (1st Generation) হচ্ছে ‘ইলেকট্রনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে electron বা  ইলেকট্রন (e) এবং electron neutrinos বা  ইলেকট্রন নিউট্রিনোস্ (Ve) অন্তর্ভুক্ত ।
  • ২য় প্রজন্ম (2nd Generation) হচ্ছে ‘মিউনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে muons বা  মিউনস্ (μ )এবং muon neutrinos বা  মিউনস্ নিউট্রিনোস্ (Vμ) অন্তর্ভুক্ত । এবং
  • ৩য় প্রজন্ম (3rd Generation) হচ্ছে ‘টাউনিক লেপ্টোন’ যার মধ্যে আছে taus বা   ট্যাউস্ (τ) এবং taus neutrinos বা  ট্যাউস্ নিউট্রিনোস্ (V τ) অন্তর্ভুক্ত ।
————————————————————————————————————————————————————–
*particle physics বা কণা পদার্থবিদ্যায় হ্যাড্রন (Hadron) হচ্ছে এক ধরণের যৌগিক কণা বা কম্পোজিট পার্টিকেল যা কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত। তড়িৎচুম্বকীয় শক্তির সাহায্যে যেভাবে অণু ও পরমাণুসমূহ পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে, তেমনি কোয়ার্কও পরস্পরের সাথে দৃঢ় শক্তির সাহায্যে সংবদ্ধ থাকে। হ্যাড্রনকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছেঃ ব্যারিয়ন (তিনটি কোয়ার্ক দিয়ে গঠিত) এবং মেসন (একটি কোয়ার্ক এবং একটি অ্যান্টিকোয়ার্ক দিয়ে গঠিত)।
সবচেয়ে পরিচিত হ্যাড্রনের মধ্যে অন্যতম হলো প্রোটন এবং নিউট্রন (দুটিই ব্যারিয়নশ্রেণীর) ,যেগুলো পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের উপাদান। প্রোটন ছাড়া অন্য সব ধরণের হ্যাড্রন অস্থিতিশীল এবং অন্য ধরণের কণায় পরিবর্তনশীল। সর্বাপেক্ষা জ্ঞাত মেসন হলো পায়োন এবং কায়োন, যেগুলো ১৯৪০-এর শেষার্ধে এবং ১৯৫০-এর প্রথমার্ধে মহাজাগতিক রশ্মি পরীক্ষার সময় আবিষ্কৃত হয়। যদিও এরাই হ্যাড্রনের একমাত্র উদাহরণ নয়; আরো বহু বহু কণা আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আবিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে।
অন্যান্য ধরণের হ্যাড্রনও থাকতে পারে, যেমন টেট্রাকোয়ার্ক (অথবা, সাধারণভাবে, exotic meson) এবং পেন্টাকোয়ার্ক (exotic baryon), কিন্তু এদের অস্তিত্বের ব্যাপারে সরাসরি কোনো সমাধানে পৌছার মতো প্রমাণ নেই।

No comments:

Post a Comment