Ads

Saturday 2 May 2015

বাস থেকে লাফ কি সামনে দিবেন? না পিছনে?

বাস থেকে লাফ কি সামনে দিবেন? না পিছনে?

আমাদের বাসে চড়ার অভিজ্ঞতা বেশ জোরালো। ১, ২, ৬, ১০ নম্বর সহ যে কত রুটের বাসে যে আমরা প্রতিদিন চড়ি। তাই সকলেই জানি যে বাস থেকে নামতে হয় কিভাবে। এমনকি বাসের নিরক্ষর কন্ডাক্টর ও নামার সময় বলে সাবধান করে দেয়। যারা পদার্থবিজ্ঞান একটু আধটু পড়েছেন আমার মত তারা সকলেই জানেন যে ব্যাপারটা ঘটে কি প্রক্রিয়ায়। আমিও কলেজে ফাঁকি দিয়ে পড়েছি বেশিদিন হয়নি। ঘটনার সত্যিকারের তাৎপর্য ওইদিন ক্লাসের বেঞ্চে বসে না বুঝাতে আজ আরও একটুখানি বিস্তৃতভাবে জানার জন্য অনেক গভীরে যেতে হল।
এটি আসলে কেন ঘটে? যারা জানেন তারা উত্তরে বলবেন যে, জড়তা বা জাড্যের জন্য। যারা আরও একটু জানেন তারা বলবেন, গতি জড়তার জন্য।
আমাদের সাথের অনেকেই পদার্থে আশি-নব্বইয়ের উপর মার্কস পেয়েও জড়তার সাথে যে এই লাফালাফির আসল সম্পর্কের ব্যাপারে আমাদের সহজভাবে বোঝাতে পারবেন বলে আমার মনে হয়না। কেননা, উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে সম্পর্কের কথা জানা অসম্ভব। ওখানে ততটুকুই জানার যতটুকু পরীক্ষায় প্রয়োজন।
আমি যেটা শিখেছিলাম সেটা হল- ”পদার্থ যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায় চিরকাল থাকার যে প্রবণতা বা সেই অবস্থা বজায় রাখার যে ধর্ম তাই- জড়তা। ”
এটি দুই প্রকার- ১. স্থিতি জড়তা ২. গতি জড়তা
আর গতি জড়তার কারণে চলন্ত বাসে ব্রেক ধরলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং এর জন্যই চলন্ত বাস হতে নামতে সামনের দিকে লাফ দিতে হয়।
কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তা পুরোপুরি সত্য না। আর এটা মোটেও আমার কথা না। বিজ্ঞানীদের কথা।
আমির-ইসহাকের বইতে আছে- ‘গতিশীল বস্তু যে ধর্মের দরুন একই সরলরেখায় গতিশীল থাকতে চায়, তাকে গতিজড়তা বলে। ‘
এই দুটি সূত্র হতে আদৌ সম্পর্কটা নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
কারন সূত্র মেনে চলতে গেলে বাস থেকে নেমে স্থির হতে আমাদের পিছনে লাফ দিতে হবে। তা ভুলেও নিজে করতে যাবেন না। তাহলে কি ঘটবে আগে থেকে বলা মুশকিল! :-)
আসলে সূত্রটা এখানে গৌণ।
আর সামনের দিকে লাফ দিলে ?
– ঠিক যে মুহূর্তে গাড়ি হতে লাফ দিলেন তখন জড়তার দরুন দেহটাও সামনের দিকে গাড়ির সমান গতিতে এগিয়ে যাবে। তাই আমাদের সামনের দিকের লাফের ফলে আমাদের বেগ গাড়ির বেগের চাইতেও বেশি হয়ে যাবে।
এই তত্ত্ব হতে সত্যি মনে হওয়া শুরু হবে যে, ‘নাহ! সামনেই লাফ দিমু…’
কারণ, সেক্ষেত্রে জড়তার দরুন আমাদের দেহের যে বেগ রয়েছে- তা হতে অন্তত লাফ-জনিত বেগটিকে বাদ দেওয়া যাবে এবং মাটি স্পর্শ করার পর আমাদের দেহ উল্টে পড়ার সম্ভাব্যতা কমে যাবে। তাই না?
একটি ঘটনার পরস্পর বিরোধী দুটো তত্ত্ব ! কোনটা নিবো ??
উত্তরটা একটু পরেই পাবেন। সত্যি বলতে কি আমরা যে পিছনে যে দিকেই লাফ দিইনা কেন- পড়ার সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। কারণ, আমাদের দেহটাতো একটা পিন্ড নয়। আমাদের পা ভূমি স্পর্শ করার পরেও দেহের উপরের দিকের যন্ত্রপাতিগুলো এগিয়েই যায়। আর তার টানেই আমাদের পড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়। আর সামনে পড়ার পর শরীরে উপরিভাগের গতি আরও বেড়ে যায়।
কিন্তু আমাদের মাঝে একটা সহজাত বিষয় আছে… যেটা হল- আমরা ভারসাম্য বা টাল সামলাতে না ভেবেই সামনের দিকে আমাদের পা বাড়িয়ে দিই, বা কয়েক পা এগিয়ে যাই। অনেকটা হাঁটার মতই।
কিন্তু বলবিদ্য অনুযায়ী, হাঁটা হল আমাদের দেহের অসংখ্য সম্মুখ পতন যা আমরা পা দিয়ে ঠেকাই।
পিছন দিকে লাফ দিলে হাঁটা নামক কেরামতিটা ফলানো মোটেও সম্ভব না বলেই পিছন দিকে লাফ দেওয়াটা
বিপদজনক।
আর সামনের দিকে যদিও পড়ে যাই, হাত দিয়ে ঠেকিয়ে আঘাত কিছুটা হুলেও লাঘব করা যায়। এজন্যই আমরা অনেকটা সহজাতভাবেই বাস থেকে সামনের দিকে লাফ দেই। যারা এই সহজাত বিষয়টা জানেনা তাদের জন্যই একটু-আধটু সমস্যা সৃষ্টি হয়। :-)
এখন কি মনে হয়না যে, এটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সৃষ্ট আমাদের সহজাত কেরামতি ?? :-)
তাই বাস থেকে নামতে হলে আপমি বাস থেকে আগে লাফ দিবেন, আর আপনার মালপত্র পিছনের দিকে করে ছুড়ে মারবেন।
মালপত্র কেন পিছনে ছুড়ে মারবেন?? তা নিজেই পরীক্ষা করুন।
শক্ত কাঁচের দুটো বোতল নিয়ে- চলন্ত বাস হতে একটি সামনের দিকে এবং অন্যটি পিছনের দিকে ছুড়ে মারুন। কোনটা চুরমার হবে আর কোনটা ফাটল ধরবে বা অক্ষত থেকে যাবে তা নিজেই বের করে ফেলুন আর সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোনটা করবেন।

No comments:

Post a Comment