Ads

Thursday 30 April 2015

নক্ষএ নগরী।

নক্ষএ নগরী।


রাতের মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে সাদা একটি আলোর পথ আকাশকে দ্বিখন্ডিত করে এক দিক থেকে অন্য দিকে চলে গেছে, আলোর এই পথটিকে মিল্কিওয়ে গ্যালাস্কী বা ছায়াপথ বলে।মহাকাশের বিশাল এলাকা জুড়ে এই ছায়াপথ গুলো ছড়িয়ে আছে।এ পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটির অধিক ছায়াপথ আবিস্কার করেছেন বিন্গানীরা। বর্তমানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ছায়াপথের অনেক অজানা তথ্য জানা গেছে যা রীতিমত বিশ্বয়কর।এই মহাবিশ্বে ছায়াপথ গুলো সুষমভাবে বিন্যাস্ত।মহাকাশের একটি অংশে যতগুলো ছায়াপথ আছে অন্য অংশে ও ঠিক ততোগুলো ছায়াপথ আছে।গবেষনালদ্ব এই তত্বটিকে বলা হয় কসমোলজিকাল প্রিন্সিপাল (Cosmological Principle)।
বিভিন্ন আকৃতির ছায়াপথ এই মহাবিশ্বে বিদ্যমান। এক একটি ছায়াপথে প্রায় ১০,০০০ কোটি নক্ষএ আছে,এবং এর সাথে আছে বিপুল পরিমান গ্যাস “হাইড্রোজেন” এবং মহাজাগতিক ধুলা। পরস্পর নিকটবর্তী অনেকগুলো ছায়াপথকে ক্লাস্টার (Cluster)বা গুচ্ছ বলে,এক একটি গুচ্ছে সহস্র থেকে হাজার পর্যন্ত ছায়াপথ থাকতে পারে। কন্যা (Virgo) মন্ডলে এই রকম একটি গুচ্ছ আছে যাকে ভিরগো ক্লাস্টার বলে। আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথ যে গুচ্ছে অবস্হিত তাকে লোকাল গ্রুপ বলে, প্রায় 31টি ছায়াপথ নিয়ে এই গ্রুপ গঠিত। এই গ্রুপের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথের নাম “লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড”,এর দুরত্ব 170,000 আলোকবর্ষ। বিখ্যাত জ্যের্তিবিদ এডুইন হাবল ছায়াপথ গুলিকে চার ভাগে ভাগ করেন।
১: ইলিপটিক্যাল  (Elliptical) গ্যালাক্সী ।
২: স্পাইরাল  (Spiral) গ্যালাক্সী।
৩: ব্যা’রেড স্পাইরাল  (Barred Spiral) গ্যালাক্সী।
৪:  অনিয়মিত  (Irregular) গ্যালাস্কী।
ইলিপটিক্যাল বা উপবৃও গ্যালাস্কী: এই গ্যালাস্কী সমুহ ডিম্বাকৃতি ক্রমবিন্যাস অনুয়ায়ী এই গ্যালাস্কীর ভর আকার এবং ঔজ্জ্বল অধিকার করে আছে।এক মিলিয়ন নক্ষত্রের একত্রিত গুচ্ছের সাথে সবচেয়ে ছোট উপবৃও গ্যালাস্কীর তুলনা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় উপবৃও গ্যালাস্কী ধারন করে প্রায় 10 লিখে তেরটি শূন্য দিলে যত সংখ্যা হবে ততোগুলি নক্ষএ ধারন করে।এই গ্যালাস্কীতে সামান্য পরিমানে গ্যাস ও ধুলিকনা থাকে।এই গ্যালাস্কী বেশির ভাগ গ্যাস ও ধুলিকনা নক্ষত্রের মধ্যে পরিবর্তীত করতে পারে ।উপবৃও গ্যালাস্কীতে নক্ষএ সৃস্টির বালাই নেই। এম ৮৭ (M87) এই রকম একটি অতি বড় উপবৃও গ্যালাস্কী।
স্পাইরাল বা বেস্টনকারী গ্যালাস্কী: এরা হচ্ছে সবচয়ে বড় গ্যালাস্কী। এর পেচানো বাহুতে প্রচুর পরিমানে গ্যাস ও ধুলিকনা থাকে। গ্যালাস্কীর কেন্দ্র হতেই এই বাহুর সৃস্টি হয়। এই গ্যালাস্কীর ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষের চেয়ে ও বেশী। এর ঔজ্জল্য সূর্যের চেয়ে ১০ বিলিয়ন গুন বেশী, এর এক বাহু থেকে অন্য বাহুর দুরত্ব প্রায় ১৫০০ পারসেক (১ পারসেক = ১৯,২০০,০০০,০০০,০০০ মাইল )। এই গ্যালাস্কীর গঠন খুব জটিল , এর কেন্দ্রের দিকে রয়েছে পুরানো নক্ষএ সমুহ, আর পেচানো বাহুর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে উজ্জল ও নবীন নক্ষএ সমুহ। এই পেচানো বাহু গ্যালাস্কীর কেন্দ্রের দিকে ঘুরতে থাকে,কিন্ত কেন্দ্রীয় অংশ পেচানো বাহুর চেয়ে অধিক বেগে ঘুর্নায়মান। এম ৮১ উরসা মেজর গ্যালাস্কীটি বেস্ঠনকারী গ্যালাস্কীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর উদাহরন। এর রয়েছে আলোকজ্জল বাহু এবং স্ফীত অংশ সুস্পস্ট ।এর দুরত্ব ২ মিলিয়ন পারসেক।
বারড্ স্পাইরাল বা দন্ডাকার বাহুযুক্ত গ্যালাস্কী: একটি সাধারন বাহু যুক্ত গ্যালাস্কীর মতই এই দন্ডাকার বাহুযুক্ত গ্যালাস্কী। কিন্ত এই বাহু গ্যালাস্কীর কেন্দ্রীয় অংশ থেকে শুরু হয়নি, দন্ডের মাথা থেকে বক্রকার বাহুগুলির সৃস্টি।এই দুই বাহুতে নক্ষএ সমুহ সজ্জিত থাকে। ধারনা করা হয় এই সকল বেস্ঠনকারি গ্যালাস্কীতে প্রথমে দন্ডাকার বাহু থাকে এবং পরবর্তিতে মিলিয়ে যায়। এই রকম একটি গ্যালাস্কী হলো এন জি সি (নিউ জেনারেল ক্যাটালগ) 1300।
অনিয়মিত গ্যালাস্কী: এর নির্দিস্ট কোন আকার নেই, দেখতে মোচরানো বা কোচকানো ধরনের। এর বহিঃ অংশের আকৃতি ছোট বেস্ঠনকারী বাহুর মত দেখায়।এই গ্যালাস্কীর অধিকাংশ বৃহৎ গ্যালাস্কীর কাছাকাছি থাকে। কিছু জ্যোতির্বিদ মনে করেন এই ধরনের গ্যালাস্কী বিবর্ধিত হয়ে দন্ডাকার বেস্ঠনকারী গ্যালাস্কীতে রুপান্তরিত হয়। এই রকম একটি অনিয়মিত ছায়াপথ হলো স্মল ম্যাগেলানিক (S.M.C) ক্লাউড এর দুরত্ব 190,000 আলোকবর্ষ।
হাবলের শ্রেনী বিভাগ মেনে নিয়ে দেখা যায় যে, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাস্কী অ্যানড্রোমিডা M-31 গ্যালাস্কী ইত্যাদির আকার ও উজ্জলতার দিক থেকে সাধারন গ্যালাস্কী হিসাবে ধরা চলে। এছাড়াও রেডিও বিকিরনের সাহায্যে গ্যালাস্কী গুলোকে আরো একটি উপায়ে বিচার করা যায়। বেস্ঠনকারী গ্যালাস্কীর আলো ও রেডিও বিকিরন তুলনীয় মাত্রার কিন্ত উপবৃত্তাকার গ্যালাস্কীর এই দুই বিকিরনের মাত্রা কিছু কম। এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা কোটি কোটি গ্যালাস্কীর মধ্যে এমন কিছু গ্যালাস্কী আছে যা রেডিও তরংগের ত্রীব উৎস ।এমন একটি যুগল গ্যালাস্কী হলো “সিগনাস” (Cygnus)।এখানে দুইটি গ্যালাস্কীর সংঘর্ষে এই রেডিও বিকিরন হয়। এর দুরত্ব ৫০ কোটি আলোকবর্ষ। এই বিকিরন অন্যান্য গ্যালাস্কীর চেয়ে ১০ লক্ষ গুন বেশী। এই ধরনের গ্যালাস্কীকে রেডিও গ্যালাস্কী বলে। মহাবিশ্বে এইসব গ্যালাস্কীর মধ্যে 80 শতাংশ কুন্ডলী বিশিস্ঠ, 17 শতাংশ বৃত্তাকার, 2 শতাংশ অনিয়মিত।একটি গ্যালাস্কী থেকে অন্যটির দুরত্ব হাজার লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ।
সবশেষে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাস্কী সম্পর্কে কিছু বলি রাতের আকাশে আমরা যে গ্যালাস্কী দেখতে পাই তা হলো আমাদের ছায়াপথর পেচানো বাহুর একটি অংশ মাএ।আমাদের ছায়াপথ দেখতে অ্যানড্রোমিডা M-31 গ্যালাস্কীর মতো, দুটিই স্পাইরাল। ভর সূর্যের ভরের 10,000 কোটি গুন, উজ্জলতায় 1000 কোটি গুন।এর দৈঘ্য প্রায় 1 লক্ষ আলোকবর্ষ,প্রস্হ প্রায় 32000 আলোকবর্ষ (1 Light year = 5,878,000,000,000 mile. 9,457,702,000,000 km)। আমাদের সৌরজগত আছে এর একটি বাহুর শেষ প্রান্তে। সূর্য থেকে এর কেন্দ্রে আলো পৌছাতে সময় লাগে 25,000 বছর।এর ভিতরে আছে 100 বিলিয়ন নক্ষএ। সূর্য সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ নিয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রের চারিদিকে ঘুরছে এবং একবার ঘুরতে সূর্যের সময় লাগে 20 কোটি বছর।।রেডিও দুরবীনের সাহায্যে বহুদুরের ছায়াপথের সন্ধান পেয়েছে যেখান থেকে আলোর যাত্রা শুরু হয়েছে আমাদের সৌরজগত সৃস্টির আগে।জ্যোতির্বিদরা রেডিও দুরবীন ব্যাবহার করে প্রায় 7 কোটি আলোকবর্ষ দুরে বিশাল এক মহাজাগতিক মেঘের সন্ধান পেয়েছে যেখানে নতুন নক্ষএ সৃস্টি হচ্ছে, তাদের ধারনা এই মেঘ পরবর্তিতে নতুন গ্যালাস্কীতে পরিনত হবে।এর থেকেই অনুভব করা যায় গ্যালাস্কী তথা মহাবিশ্বের বিশালতা।

ছবি সৌজ্যন্যে: গুগল।




No comments:

Post a Comment